অঘটন, ইতিহাস এসব না থাকলে খেলাধুলায় আর কী মজা থাকে! মেজর কোনো টুর্নামেন্টে হলে সেটা যেকোনো দলের জন্যই আজীবন ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতো। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে একেবারে তলানিতে ২১০ নম্বরে থাকা স্যান মারিনো গত রাতে লিখল ইতিহাস।
শিরোনামে আসতে না পারলে যেন ভালোই লাগে না হোসে মরিনহোর। লাল কার্ড দেখা যে তাঁর কাছে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তারপর সেটা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেও ছাড়েন না ৬১ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ।
মেজাজ হারানোর ঘটনা কি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছে একেবারে নতুন? মোটেই তা নয়। গোল করতে না পারার হতাশা বা মাঠের কোনো সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে তৎক্ষণাৎ ক্ষোভ ঝারতে দেখা যায় তাঁকে। পর্তুগিজ তারকা ফরোয়ার্ডের কাছে তখন সেটা কোন টুর্নামেন্ট, তাতে যায় আসে না।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গত বছর কেটেছিল দুর্দান্ত। গোল যেমন করেছেন, তেমনি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন। তবে পর্তুগালের জার্সিতে এ বছর সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। হতাশাজনক ইউরোতে একটা গোলও করতে পারেননি।
গোল করে আকাশের দিকে তাকালেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দুই হাত প্রসারিত করেন। চোখও ছলছল করছিল পর্তুগিজ তারকা ফরোয়ার্ডের। দূর আকাশের তারা হয়ে যাওয়া বাবার কথা রোনালদো স্মরণ করলেন এভাবেই।
গোল ছাড়া যেন কিছুই বোঝেন না আর্লিং হালান্ড। ম্যানচেস্টার সিটিতে এসে তিনি মেতেছেন রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায়। সিটিজেনদের হয়ে গোলের সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন নরওয়ের এই স্ট্রাইকার।তাঁর (হালান্ড) সঙ্গে, পরে সব খানেই আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
এক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর যে কত রূপ। রেকর্ড তো তিনি হরহামেশাই করেন। দলের প্রয়োজনে কখনো তিনি হয়ে ওঠেন ‘সুপার সাব’। উয়েফা নেশনস লিগের গত রাতের ম্যাচে যে সিআর সেভেনকে দেখা গেছে এই রূপে।
মঞ্চটা ছিল আল নাসরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দ্বিতীয় মেজর শিরোপা জয়ের। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে সব এলোমেলো হয়ে যায়। শিরোপা আর জেতা হলো না আল নাসরের। হতাশায় সতীর্থদের প্রতি মাঠেই রাগ ঝাড়েন রোনালদো।
চমক দেখানোতেই যে অভ্যস্ত ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মাঠের পারফরম্যান্স হোক বা মাঠের বাইরের ঘটনা, নিজেকে আলোচনায় রাখতে পছন্দ করেন তিনি। পর্তুগিজ তারকা ফুটবলার এবার দেখাতে যাচ্ছেন নতুন এক চমক।
প্রিন্স সুলতান বিন আজিজ স্টেডিয়ামে গত রাতটা ছিল রোনালদোময়। আল নাসর-আল তাওউন নয়, লড়াইটা যে ছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে আল তাওউনের। আল নাসরের জয়ের পর নেইমারের আল হিলালকে এক রকম হুমকি দিয়ে রাখলেন রোনালদো।
কাউকে না কাউকে একদিন পেশাদার ক্যারিয়ারকে বিদায় বলতেই হয়। পর্তুগালের পেপে গত রাতে ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ফুটবলে দীর্ঘদিনের সতীর্থ অবসর নেওয়ায় আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
শেষ ভালো যার, সব ভালো তার—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পারেননি এই কথার সার্থকতা প্রমাণ করতে। তাঁর দল পর্তুগাল ২০২৪ ইউরোতে বিদায় নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। এমনকি তাঁর পারফরম্যান্সও ছিল না আশানুরূপ।
রেকর্ড তো গড়াই হয় রেকর্ড ভাঙার জন্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আজ যে রেকর্ড গড়া হয়, সেটা চিরস্থায়ী হয় না। দেরিতে হলেও কোনো না কোনো দিন ঠিকই ভেঙে যায়। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বহু পুরোনো এক রেকর্ড ভেঙে দিলেন স্পেনের তরুণ ফুটবলার ল্যামিন ইয়ামাল।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চোখে জল যেন এখন বেশ পরিচিত ছবি। শেষ ষোলোর ম্যাচের পর গত রাতে কেঁদেছেন কোয়ার্টার ফাইনালে। এবারের কান্না শেষ আট থেকে ছিটকে যাওয়ার দুঃখে।
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে নাক ভাঙার পর মুখে মাস্ক পড়ে খেলতে হচ্ছে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে খাওয়া ধাক্কাটা যেন এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখন পর্যন্ত গোল করেছেন মাত্র ১টি, সেটিও পেনাল্টি থেকে। ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ফ্রান্সের গোল ওই একটিই। মূলত ফরাসিরা এতদূর এসেছে প্রতিপক্ষের আত্মঘা
খেলার মাঠে কখনো যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কাঁদেননি, তা নয়। ২০২২ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল হারার পর তাঁর কান্নাভেজা চোখের ছবি এখনো টাটকা। ইউরোতে গত রাতে আবারও অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে।
আমি রেকর্ডের পেছনে দৌড়াই না, রেকর্ড আমার পেছনে দৌড়ায়—কদিন আগে আল নাসরের জার্সিতে রেকর্ড গড়ার পর এমন পোস্ট দিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। শুধু ক্লাব ফুটবলই নয়, আন্তর্জাতিক ফুটবলেও অসংখ্য রেকর্ড নিজের নামে লিখিয়েছেন রোনালদো। পর্তুগিজ তারকা ফুটবলারের ২০ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে গেছে গত রাতে।